এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা - অলিভ অয়েল কোনটা ভালো

প্রিয় পাঠক আপনারা প্রশ্ন করেছেন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা সম্পর্কে। আজ আপনাদের জানাবো এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা ও অলিভ অয়েল কোনটা ভালো সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। আপনারা নিচের আর্টিকেল টুকু পড়লে জানতে পারবেন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা ও অলিভ অয়েল কোনটা ভালো সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
এক্সট্রা - ভার্জিন - অলিভ - অয়েল - এর - উপকারিতা

পোস্ট সূচিপত্রঃ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা - অলিভ অয়েল কোনটা ভালো

ভূমিকা 

অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল কয়েক ধরনের হয়ে থাকে, এর মধ্যে সবথেকে কম পরিশোধিত হল এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনেক বেশি। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, পলিফেনল সমৃদ্ধ এছাড়াও রয়েছে অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য আর তাই এটি ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আজ আপনাদের মাঝে আলোচনা করব এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। চলুন তাহলে নিচে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা রয়েছে অনেক বেশি। এই অলিভ অয়েল একজন মানুষের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি নানা রকমের শারীরিক সমস্যার হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা সম্পর্কে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলোঃ
  • খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেঃ আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হার্টের যেকোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা হয়ে থাকে। আর এই খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে পলিফেনল নামক উপাদানটি আমাদের শরীরের কোষের কার্যক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে, এতে করে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে। আর তাই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আমাদের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • ডায়াবেটিস সমস্যায়ঃ আজকাল ডায়াবেটিসের সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়, এ রোগ হতে কোন বয়স লাগে না অর্থাৎ ছোট বা বড় যেকোনো বয়সের মানুষের ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা যায়। আপনি যদি নিয়মিতভাবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল গ্রহন করেন তাহলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। কারণ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে রয়েছে পলিফেনল ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে শরীরকে ভালো রাখে। এছাড়াও এটি শরীরের কার্বোহাইড্রেট শোষণ করে থাকে, এর ফলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়।
  • ক্যান্সার রোগেঃ আমরা জানি ক্যান্সার কতটা ভয়ানক একটি রোগ, এক কথায় মরণব্যাধি রোগ ক্যান্সার। তবে, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এ থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ক্ষতিকর টক্সিন গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে ক্যান্সারের সমস্যা কে ধ্বংস করে দেয়। নিয়মিতভাবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল গ্রহণ করার ফলে দেহের অস্বাভাবিক কোষগুলো গঠনে বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর তাই শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিতভাবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল গ্রহণ করুন।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা। বর্তমান সময়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিফেনল যা শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আর তাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার সমাধান হিসেবে নিয়মিত এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল গ্রহন করুন।
  • ত্বকের যত্নেঃ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে থাকা পলিফেনল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে সেই সাথে শরীরের যে কোনো ক্ষত নিরাময় করে খুব দ্রুত। আর তাই ত্বকের যত্নে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আপনার জন্য খুব উপকারী হবে।
  • অ্যান্টি এজিং হিসেবেঃ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অ্যান্টি এজিং বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত করে, এছাড়াও ত্বকের প্রদাহ কমাতে বেশ কার্যকর। শরীরে মাঝে মাঝে অবাঞ্চিত ব্যাকটেরিয়া, আঘাত ও সংক্রমণ দেখা দেয় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এসব কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে।

অলিভ অয়েল কোনটা ভালো

আপনারা জানেন কয়েক ধরনের অলিভ অয়েল পাওয়া যায়, আর প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা গুণ রয়েছে। সব ধরনের অলিভ অয়েল ভালো তবে সবথেকে বেশি ভালো এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, অলিভ অয়েল কয় ধরনের এবং এর কাজ গুলো কি কি।
  • এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলঃ  এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল উচ্চ মান সম্পূর্ণ একটি অয়েল, এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনেক বেশি। এটি সবচেয়ে কম পরিশোধিত উপায়ে তৈরি করা হয়, এতে কোনরকম কেমিক্যাল এর ব্যবহার হয় না। আর তাই এটির গন্ধ ও স্বাদ অনেক গুণ বেশি। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের রং কিছুটা হালকা সবুজ ও গোল্ডেন হয়ে থাকে। এটি অপরিশোধিত তেল তাই একটু তিক্ত স্বাদের হয়।
  • ভার্জিন অলিভ অয়েলঃ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের পরেই রয়েছে ভার্জিন অলিভ অয়েল অর্থাৎ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর থেকে কিছুটা নিম্নমানের। এটিও আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী, বিশেষ করে এই ভার্জিন অলিভ অয়েলটি বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা যায়। এছাড়া ত্বকের যত্নে বেশ কার্যকর, প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে চুলে ব্যবহার করা যায় এই ভার্জিন অলিভ অয়েল। এটির রং হালকা হলুদের মত হয়ে থাকে।
  • রিফাইন অলিভ অয়েলঃ রিফাইন অলিভ অয়েলটি যেহেতু রিফাইন করা হয় তাই, অলিভ অয়েলের ভেতরে থাকা ন্যাচারাল এসিডিসি বাদ দেওয়া হয়। এই অয়েল রিফাইন করার কারণে এর মাঝে তেমন কোন স্বাদ বা গন্ধ পাওয়া যায় না। তবে, এই তেলটি রান্নায় ব্যবহারের জন্য বেশ উপযোগী।
  • পিওর অলিভ অয়েলঃ আমরা সাধারণত পিওর শুনলেই খাঁটি মনে করতে পারি তবে এটি আসলে একটি নাম। এই অলিভ অয়েলটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ও ভার্জিন অলিভ অয়েল দুটি অলিভ অয়েলের সংমিশ্রনেই তৈরি করা হয়। এই অয়েলটি রান্নার জন্য ব্যবহার করা যায়। তবে, ত্বকের যত্নে বা সালাদ তৈরিতে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এরও তেমন কোনো গন্ধ নেই।
  • লাইট অলিভ অয়েলঃ অলিভ অয়েলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা গেলেও এই লাইট অলিভ অয়েল মানের দিক থেকে সবথেকে নিম্ন অর্থাৎ এতে তেমন কোনো পুষ্টিগুণ থাকে না। এটা শুধুমাত্র রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।
আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন কোন অলিভ অয়েল ভালো আশা করি আপনারা উত্তরটি পেয়েছেন, সবচাইতে বেশি উপকারী অয়েল হল এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল।

আসল অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তবে, এটি আসল নাকি নকল সেটি যাচাই করারও দরকার রয়েছে। কারণ অনেকেই অলিভ অয়েলে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মিশ্রিত করে থাকে, আজ আপনাদের জানাবো আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেই আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়।
  • ঘনত্বঃ আসল অলিভ অয়েল চিনতে হলে এর ঘনত্ব কতটা সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। কারণ আসল অলিভ অয়েলে বেশি পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায় এই তেলটি অন্যান্য তেলের তুলনায় অনেক বেশি ঘন হয়ে থাকে অর্থাৎ এই তেলের ঘনত্ব অনেক বেশি হয়। অলিভ অয়েল আসল নাকি নকল এটি বুঝতে হলে আপনাকে এই তেলের ঘনত্ব টা খেয়াল করতে হবে। কারণ আপনি যদি অলিভ অয়েলের পাশে অন্য কোন অয়েল রাখেন তাহলে খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করতে পারবেন অলিভ অয়েলের ঘনত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে ঠান্ডা স্থানে এ তেল রেখে দিলে ধীরে ধীরে এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। তবে, অলিভ অয়েল যদি নকল হয় সেক্ষেত্রে ঘনত্বের কোনরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে না এ বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল করে নিবেন।
  • অলিভ অয়েল এর মেয়াদঃ আসল অলিভ অয়েল বা খাঁটি অলিভ অয়েল এর মেয়াদ সাধারণত দুই বছর দেওয়া থাকে। আপনি যখন অলিভ অয়েল কিনবেন তখন সে বোতলের গায়ে সুন্দরভাবে লিখে দেওয়া থাকবে দুই বছর মেয়াদ। তবে, যদি আপনি দেখেন অলিভ অয়েলের মেয়াদ দুই বছরের বেশি অর্থাৎ তিন বা চার বছর লেখা থাকে তাহলে এই তেল কখনোই কিনবেন না কারণ এটি নকল।
  • বোতল দেখে কিনুনঃ আসল অলিভ অয়েল তৈরি করার পরপরই তা কাচের বোতলে সংগ্রহ করা হয় এবং সূর্যের তাপ থেকে দূরে রাখা হয়। কারণ অতিরিক্ত তাপমাত্রায় অলিভ অয়েল এর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তবে আপনি কখনোই পাতলা টিনের বা প্লাস্টিকের বোতলে থাকা অলিভ অয়েল ক্রয় করবেন না।
  • অলিভ অয়েল এর দামঃ অলিভ অয়েল অনেক বেশি উপকারী হলেও এর দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ সব সময় ব্যবহার করতে পারেনা। আবার এমনও অনেকে আছেন যারা অলিভ অয়েলের গুণগত মান সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। তবে খাঁটি অলিভ অয়েল দামের দিক থেকে বেশি হওয়ায় সহজে পাওয়া যায় না। তাই অলিভ অয়েল কেনার ক্ষেত্রে কাচের বোতলে সংগ্রহ করা এবং খাঁটি বুঝে তারপর  ক্রয় করুন।

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা - অলিভ অয়েল কোনটা ভালোঃ উপসংহার

অলিভ অয়েল আমাদের জন্য খুবই উপকারী, এটি যেহেতু বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে তাই এটির এক একটি ব্যবহার একেক রকম। তবে আপনারা চেষ্টা করবেন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করার, কারণ এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপাদান আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জেনেছেন, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর উপকারিতা, অলিভ অয়েল কোনটা ভালো ও আসল অলিভ অয়েল সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। আরো এমন নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, আসসালামু-আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪